স্মার্টফোনে ভিডিও বানানোর এ টু জেড

যারা ইউটিউব ব্যবহারে মোটামুটি অভ্যস্ত তারা সবাই একটা বিষয় সহজেই অনুধাবন করতে পারেন যে বেশিরভাগ ভিডিও স্মার্টফোন দিয়ে করা । বর্তমানে সাধ্যের মধ্যে দারুণ সব ফিচারের স্মার্টফোন দিয়ে বেশ সুন্দর ভিডিও বানানো সম্ভব। স্মার্টফোন দিয়ে ইউটিউব ভিডিও বানানো যায় যা দেখতে মনে হয় ক্যামেরা দিয়ে তৈরি করা ভিডিও।

ভিডিও বানানোর টেকনিক 

 

আপনিও যদি ইউটিউব বা ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম এর জন্য ভিডিও বানাতে চান কিংবা 

অনলাইনে শেখানোর ডিজিটাল ইন্সট্রাক্টর হতে চান তো সেজন্য কিছু সহজ প্রস্তুতি নিলেই চলবে।  কিছু 

৩ টি উপকরণ কিনে ফেললে মোটামুটি অনেকটুকু কাজ হয়ে যাবে। 

  • লাইট
  • স্ট্যান্ড বা ট্রাইপড
  • মাইক্রোফোন

 

এই লেখা আপনি যেহেতু পড়ছেন আমি নিশ্চিত আপনার একটি ভালো স্মার্টফোন আছে। কাজেই লাইট এবং স্ট্যান্ড এবং সাউন্ড এর জন্য মাইক্রোফোন কিনলেই কিন্তু কাজ অনেকখানি এগিয়ে যায়। 

তো এগুলোর কোনটার কি কাজ তা জেনে নিই। 

লাইট

একটু উজ্জ্বল আলোতে ভিডিও বানালে ভালো কারণ স্মার্টফোনে ভালো আলো পাওয়া যায় না। তাই এক্সট্রা লাইট ব্যবহার করলে ভিডিও বানানোতে রেজ্যুলেশন ভালো আসে এবং ভিডিও স্পষ্ট হয়। বাজারে দু ধরণের লাইট পাওয়া যায়, রিং লাইট ও সফট বক্স লাইট। দুটো দুভাবে কাজ করে থাকে। আপনার সুবিধা অনুযায়ী এগুলো ব্যবহার করুন।রিং লাইট ব্যবহারের সুবিধা হলো এর অন্য আলাদা ক্যামেরা স্ট্যান্ডের প্রয়োজন হয় না। লাইটের সঙ্গে স্ট্যান্ড থাকায় ছবি তোলা থেকে শুরু করে মেকআপ করার ভিডিওসহ বিভিন্ন ধরনের ভিডিও সহজেই করা যায়। অন্যদিকে সফট বক্স দূর থেকে আলো দিয়ে থাকে। সফট বক্স দিয়েও পুরো চেহারা আলোকিত করা সম্ভব, তবে সে ক্ষেত্রে দুটি সফট বক্সের দরকার হয়। নাটক, সিনেমা ও গবেষণাধর্মী ভিডিও ও বিভিন্ন প্রতিবেদনমূলক ভিডিও তৈরিতে সফট বক্স বেশি ব্যবহার করা হয়।

স্ট্যান্ড

স্মার্টফোন দিয়ে ভিডিও বানানোর জন্য একটি স্ট্যান্ড এর প্রয়োজন । স্ট্যান্ড না থাকলে ভিডিও করতে গিয়ে আপনাকে একটু বিপাকে পড়তেই পারেন । স্ট্যান্ড এর কাজ মূলত একটি জায়গায় স্থির থেকে আপনার ভিডিওটি ধারণ করা, নতুবা হাতে ধরে ভিডিও করলে ভিডিও কাঁপাকাপি করতে পারে । তবে স্ট্যান্ড বা ট্রাইপডে ভিডিও বানানোর বেশ কার্যকারিতা কিন্তু রয়েছে । ট্রাইপড বা স্ট্যান্ড আপনি যেকোনো ইলেক্ট্রনিক দোকানে পাবেন এবং দামেও খুব সল্প। 

মাইক্রোফোন

স্মার্টফোন  দিয়ে ইউটিউব ভিডিও বানানোর জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ন উপকরণ হলো মাইক্রোফোন। মাইক্রোফোনটি একটু খেয়াল করে যাচাই করতে হবে।  মাইক্রোফোন দিয়ে কথা না বললে ভিডিওতে আপনার কথা অস্পষ্ট আসার সম্ভাবনা রয়েছে এতে মানুষের কথা বুঝতে কষ্ট হবে। তাই আপনি যখন স্মার্টফোন  দিয়ে ইউটিউব ভিডিও বানাবেন তখন আপনি মাইক্রোফোন দিয়ে কথা রেকর্ড করার চেষ্টা করবেন। আপনারা মাইক্রোফন ট্রাইপড বা স্ট্যান্ড যে দোকান থেকে কিনবেন সেখান থেকে নিতে পারেন অথবা আপনি চাইলে কোনো অনলাইন শপ থেকে কিনতে পারেন। এগুলো সব জায়গাতে সহজলভ্য।

ভিডিও বানানোর পর এসে পড়ে এডিটের প্রসঙ্গ। এডিট ছাড়াই আপলোড করেন ভিডিওটি কাঙ্ক্ষিত পরিমানে সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকখানি কমে আসে। আপনার স্মার্টফোন  দিয়ে ভিডিও বানানোর পর স্মার্টফোনের উপযোগী কিছু এডিটর এপ আপনি পেয়ে যাবেন যেগুলো দিয়ে সহজেই এডিট করতে পারেন। 

 

স্মার্টফোনে ভিডিও এডিট

 

স্মার্টফোনের উপযোগী এপের মাধ্যমে আপনি সহজেই ভিডিও এডিট করতে পারেন। 

এমন তিনটি এপ হলো

 

  • Open camera and XRecorder 
  • Kine master 
  • Lexis Audio Editor and Pixellab 

 

চলুন তাহলে এই অ্যাপগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক

Open Camera and XRecorder 

এই দুইটি অ্যাপস মূলত ব্যবহার করা হয় ভিডিওটি রেকর্ড করার জন্য। Open Camera ব্যবহার করলে আপনি স্মার্টফোন  ক্যামেরাতে যেরকম ভিডিও বানাতেন তার থেকে কোয়ালিটি অনেক ভালো হবে। তাই চেষ্টা করবেন ভিডিও করার সময় এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে। 

আর যারা স্ক্রীন রেকর্ড করেন তাদের জন্য সাজেস্ট করব আপনারা XRecorder ব্যবহার করবেন। তাহলে আপনাদের ভিডিও এর মান ভালো হবে অনেক।

KineMaster Lite

এটি মূলত ব্যবহার করা হয় ভিডিওটি এডিট করার ক্ষেত্রে। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো আপনি এই অ্যাপ এর সাহায্যে স্মার্টফোন  দিয়ে আপনার ভিডিওটি এডিট করতে পারবেন সহজে। 

Lexis Audio Editor and PixelLab

এগুলো ব্যবহার করা সাউন্ড কোয়ালিটি ভালো করার জন্য। আপনি এই দুইটি অ্যাপস দিয়ে আপনার ভিডিও এর সাউন্ড কোয়ালিটি সুন্দর করতে পারবে।

 

এছাড়াও আপনি যদি অন্য কোনো অ্যাপ ব্যবহার করতে চান তাহলে আপনি গুগল প্লেস্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। 

 

যে ১০ টি বিষয় অনুসরণ করে ভিডিও বানাবেন

 

১। ফ্রন্ট ক্যামেরা ব্যবহার করে ভিডিও বানাবেন না। সবসময় ব্যাক ক্যামেরা দিয়েই ভিডিও বানান। 

কারণ ব্যাক ক্যামেরার রেজুল্যুশন অনেক ভাল হয়ে থাকে। 

২। আপনার পেছনের ব্যকগ্রাউন্ড যেন একটু ভাল জায়গায় হয়। আপনার বাসার দেয়াল কিংবা পড়ার টেবিলের বইগুলোকে ব্যাকগারুন্ড বানিয়ে আপনি বেশ ভাল ব্যাকগ্রাউন্ড সৃষ্টি করতে পারেন। 

৩। স্ট্যান্ড বা ট্রাইপড দিয়েই যে ভিডিও বানাতে হবে তা নয়। কোনো একটি বালিশ, কুশন কিংবা কিছু বইয়ের সাহায্যে ক্যামেরাটি রেখে এরপর ভিডিও শ্যুট করতে পারবেন। 

৪। মোবাইলের ক্যামেরার সাহায্যেই আপনি সাউন্ড রেকর্ড করতে পারেন। ডিফল্ট সাউন্ড রেকর্ডারটিই আপনার ভিডিওর জন্য যথেষ্ট হতে পারে। এর সাউন্ড রেকর্ড কোয়ালিটিও কিন্তু স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো বেশ ভালোভাবেই করছে। 

আর যদি সাউন্ড রেকর্ডের কোয়ালিটি আরো ভাল করতে ১০০০ টাকার একটি সাউন্ড রেকর্ডার কিনতে পারেন। Boya by M1 নামের মাইক্রোফোনটি কিনতে পারেন। 

৫। বাসার লাইট ব্যবহার করেই আপনি বেশ ভাল লাইটিং পেতে পারেন। এছাড়া সূর্য্যের আলোর সাহায্যে যদি ভিডিও বানানো হয় তবে সেই ভিডিও অনেকখানি সহজ হয়ে যায়। বেশ উজ্জ্বল আলো পাবেন দিনের আলোয় ভিডিও করার জন্য। 

৬। ভিডিও করা হয়ে গেলে ভিডিও এডিটিং এর চিন্তা এসে পড়ে। ভিডিও এডিটিং খুব কঠিন কিছু নয়। 

  আপনি কম্পিউটারে Camptasia এর মাধ্যমে সহজেই ভিডিও এডিট করতে পারেন। আর স্মার্টফোনের বেলায় Kine Master বেশ ভালো একটি এপ। এর সাহায্যেও আপনি সহজেই ভিডিও এডিট করতে পারেন। এছাড়া Inshot নামের বহুল প্রচলিত এপের সাহায্যেও আপনি খুব সহজেই কাঙ্ক্ষিত ভিডিওটি বেশ সুন্দরভাবে এডিট করতে পারেন। 

৭। থাম্বনেইল যদি আপনি বানাতে চান তারও রয়েছে দারুণ সমাধান। প্লেস্টোরে Thumbnail Maker বা Thumbnail Generator লিখে সার্চ করলে সহজেই অনেক থাম্বনেইল বানানোর এপ পেয়ে যাবেন।

 ফ্রি টেমপ্লেটের সাহায্যে আপনি বানাতে পারবেন থাম্বনেইল । 

 

ভিডিও বানানোর ইতিকথা 

 

ভিডিও বানানোর কাজটি তো সহজ নয়। আবার তেমন কঠিন কিছুও নয়। আপনি শুরু করে দেওয়া মানেই কিন্তু অনেকটুকু সহজ হয়ে যাওয়া। তাই আজই শুরু করে দিন আপনার ভিডিও বানানো আর হয়ে উঠুন আগামীর স্টার। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *